জীবনের দর্শন নিয়ে বাংলা কবিতা - জীবনচক্র | অপু চন্দ্র বর্মণ

জীবনচক্র | বাংলা কবিতা - অপু চন্দ্র বর্মণ

জীবনচক্র

কবি: অপু চন্দ্র বর্মণ

জীবন এক মহাসংগ্রাম, অদৃশ্য অরুণোদয়,
জন্মমুহূর্তেই জড়ায় বিপুল কর্মপথের পরিচয়।
আত্মার অনন্ত যাত্রা, শরীররূপে আবির্ভাব,
জ্ঞান, তপ, তিতিক্ষা, সবই জীবনরূপ সৌকর্য অভিসার।

প্রথমে শৈশব—নির্বিকার, নির্মল, নির্মিত অনুরাগে,
কৌতূহলরূপে জাগে প্রশ্ন, “কে আমি? কোথা হতে আগমনে?”
তারপর কৈশোর—চঞ্চল বায়ুর গর্জন, আকাঙ্ক্ষার উত্থান,
সত্তার অন্তরালে জাগে অপরিণত আত্মাভিমান।

যৌবন-প্রান্তরে আসে প্রলয়রূপ শক্তি, প্রজ্বলিত অঙ্গার,
প্রেম, রাজনীতি, অর্থ, কাম—সবই নানাবিধ অভিসার।
এই সময়েই মনুষ্য আত্মা বিভ্রান্ত, বিভক্ত, বিভোর,
চিরন্তন সত্যসন্ধান কল্পনা করে জীবন-নির্ণয়ের আধার।

বৃদ্ধি আসে—অভিজ্ঞতার অর্ঘ্য হাতে, বিষাদময় দৃষ্টি,
মরণ চিন্তায় মগ্ন, অন্তর্দর্শনের নিঃসঙ্গ সাক্ষী।
সমূহ জীবন যেন এক মহাকাব্যের কাহিনী,
কর্মফল-যুক্তির বন্ধনে বাঁধা প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি ঋণ।

পথে পথে নানান বৈপরীত্য—বিপদ, বিচ্যুতি, বিষাদ,
প্রতিটি পদক্ষেপে সময়ের ক্লান্ত অবসাদ।
তবুও আত্মা সঞ্চরণ করে অনন্ত মুক্তির অভিলাষে,
ধর্ম, তত্ত্ব, দর্শন—যেতে চায় চিরমোক্ষ-আলোকপ্রকাশে।

জীবন তো কেবল সুখানুভবের অধিষ্ঠান নয়,
এ এক পরীক্ষাস্বরূপ মঞ্চ, চেতনার দীপ্ত জয়।
দুঃখ, দুর্ভিক্ষ, প্রেমবঞ্চনা—এ সকলই তপস্যার তীর,
মানব চেতনার পূর্ণতাই হয় আত্মার মোক্ষ-নির্মল নীর।

অন্তিমে আসে—মৃত্যু, নীরব, শ্মশ্রাণিত ছায়া,
জীবনের কর্মফল নির্ণয় করে তার পরিণাম-রায়া।
যদি ত্যাগ, সেবার শিখা জ্বলে হৃদয়গভীরে,
তবে মৃত্যুও হয় মহোৎসব, আত্মার আলোকনির্ঝরে।

জীবন এক বারম্বার অভ্যুদয় ও বিলয়ের অধ্যায়,
যেখানে প্রতিটি নিঃশ্বাসে লুকায় চিরসত্যের পরিচয়।
তাই হে মানব, জাগো, বুঝো এই অনন্ত অভিযাত্রা,
জীবনকে করো কর্মযোগ, জ্ঞানে ভাসো, প্রেমে মাতো আত্মা।

© 2025 অপু চন্দ্র বর্মণ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Next Post Previous Post