অপু চন্দ্র বর্মনের লেখা 'বাঁধনহারা' কবিতাটি একটি স্বাধীনচেতা আত্মার কণ্ঠস্বর, যেখানে কবি বেছে নিয়েছেন কবিতা, প্রকৃতি ও ভালোবাসার জীবন


বাঁধনহারা


চাই না আমি চাকরি বাকরি
চাই না আমি রাজ প্রাসাদ,
চাই না টাই পরা সকাল
চাই না কাঁচের ঘরে বন্দি হওয়া শূন্যতা।
আমি চাই খালি একটা মাঠ
যেখানে ঘাসেরা কথা বলে,
চাই আকাশ, নীল, কুয়াশা, ধোঁয়াটে বিকেল
চাই পাখিরা যেন ডাকে আমার নামে,
আমি যেন হারিয়ে যাই শব্দের নদীতে।
হ্যাঁ, আমি চেয়েছি একদিন বড়লোক হতে
কিন্তু এখন চাই একটা পুরনো ডায়েরি
যার পাতায় লেখা থাকবে কিছু এলোমেলো বর্ণ
আমি চেয়েছি বিখ্যাত হতে
এখন চাই নাম না থাকা অচেনা একটা গান হতে
যা রাত জেগে কেউ একজন শুনবে কানে হেডফোনে।
চাই না আমি এসি রুমে বন্দি স্বপ্ন
চাই না গাড়ির হর্ণে হারিয়ে যাওয়া হৃদস্পন্দন,
আমার স্বপ্ন ধূলোর মতো,
যা বাতাসে উড়ে উড়ে যায়
আর কবিতার মতো ঘুরে বেড়ায় কারো কারো হৃদয়ে।
চাকরি আমাকে গিলতে চায়
একটা ফাইলের ভেতর আমাকে পুরে রাখতে চায়
আমি চাই না,
চাই না আমি “স্যার” শব্দের নিচে মাথা নত করতে।
আমি চাই একটা ভোর,
যেখানে ঘুম থেকে উঠে শুনব—
পাখি বলছে: “আজ কবিতা লিখো”
আমি লিখে ফেলব, ছেঁড়া কাগজে, চা হাতে,
একটি অসমাপ্ত কবিতা।
চাই না আমি বস হতে
চাই না কারো বস থাকতে
চাই, শুধু একটু ভালোবাসা
যে ভালোবাসা শব্দে রূপ নেবে না কখনো
কিন্তু থাকবে পাশে, নিঃশ্বাসে।
আমি চাই গাছের ছায়ায় ঘুমোতে
একটা বই বুকে নিয়ে
চাই, দুঃখ যেন আসুক
কিন্তু কবিতা হয়ে আসুক
কান্না যেন আসে
কিন্তু ছন্দহীন গান হয়ে বয়ে যাক।
আমি চাই না ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স
চাই না ডিজিটাল গর্ব
আমি চাই মন খারাপের বিকেল
আর এক কাপ চা,
যেখানে তুমি পাশে বসে বলবে—
“এই লাইনটা দারুণ লিখেছো!”
আমি চাই বৃষ্টি, চাই কাদা
চাই হাঁটতে হাঁটতে পা পিছলে পড়ে যাওয়া
চাই হেসে ওঠা নিজেকেই দেখে
চাই এমন কিছু মুহূর্ত
যার কোনও ছবি থাকবে না
শুধু মনে থাকবে সারাজীবন।
আমি চাই না চাকরি
তোমার দেয়া সময়েই বাঁচব আমি
আমি চাই না রাজ প্রাসাদ
তোমার চোখের ভেতরেই আমার অট্টালিকা।
যদি কখনো লিখে ফেলি
একটা বড় কিছু
তাও যেন লেখা থাকে তোমার নামে
কারণ তুমি মানেই আমার কবিতা।
আর তাই, নিয়মের বাইরে,
এই কবিতাও শুধু তোমার জন্য,
যেখানে শেষের কোনো লাইন নেই
শুধু আমি আছি, আর তুমি আছো,
আর শব্দেরা হেঁটে যাচ্ছে দূরে...
কোনো চাকরির দিকে নয়,
শুধু কবিতার দিকে।
                                                                                                        
                                                                                                            — অপু চন্দ্র বর্মন

শনিবার; ২৯ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।

রাজাগাঁও, ঠাকুরগাঁও

Next Post Previous Post