চিরবিদায়ের অরুণ প্রহর | অপু চন্দ্র বর্মনের হৃদয়ছোঁয়া বিচ্ছেদের কবিতা
চিরবিদায়ের অরুণ প্রহর
অপু চন্দ্র বর্মন
তুমি যখন চাহিলে পলকে,
সে চাহনিতে নেমে এলে প্রলয়মেঘ—
নিঃশব্দ ঘূর্ণি, তাণ্ডব এক অশ্রুবাষ্পের,
যেখানে হৃদয় ছিল—
তা রূপান্তরিত হইল এক শ্মশানসম বিরাট শূন্যতায়।
তোমার পদক্ষেপগুলি, সেই শেষ গমনরেখা,
মাটির বুকে নয়, হ্রদয়ের অন্তঃপুরে খোদিত—
প্রতিটি ধ্বনি যেন বজ্রাঘাত,
প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন মৃতপ্রায় এক প্রার্থনা,
যে প্রার্থনায় ঈশ্বর নিজেই কান ফেরালেন।
সেদিন, যে রাতে তুমি অন্তর্হিতা হলে,
আকাশও নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল—
তারা মুছে ফেলেছিলো তাদের দীপ্তি,
চাঁদ আড়াল করেছিল মুখ
অন্ধকার হয়েছিলো অন্ধকারতর—
আর আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম,
তোমার স্মৃতির অনির্বচনীয় বিস্ফোরণে বিপর্যস্ত এক যোদ্ধার মতো।
তুমি ছিলে আমার অস্তিত্বের অন্বয়,
তুমি ছিলে হৃদয়ের অন্তঃস্বর—
তোমার অবর্তমানে আমি তো শুধুই ধ্বংসস্তূপ,
যেখানে প্রেমের দেবতারা মৃতাবস্থায়।
আমি আজও সেই মুহূর্তে বন্দি,
প্রতি রজনী, যখন চোখ বুজি,
তোমার চলে যাওয়া রঙহীন চলচ্চিত্রের মতো
চোখের পর্দায় আবির্ভূত হয়—
তুমি পেছন ফিরে তাকাও না,
আমি ডাকি না, কাঁদি না—
তবু সব শব্দ নিঃশেষ হয়
একটা না বলা বিদায়ের শব্দে।
সমস্ত কবিতা, সমস্ত গীত, সমস্ত প্রার্থনা—
ব্যর্থ আজ, নিস্তেজ, নীরব,
তোমার সেই নিরুপায় পদযাত্রার কাছে।
হে প্রিয়, হে নিকটতম অনুপস্থিতি—
তুমি কি জানো,
তোমার নীরব প্রস্থান পৃথিবীর সমস্ত শোকের সংজ্ঞা নতুন করে লিখে দিয়েছিল?