ছোটগল্পের সংজ্ঞা ও তাৎপর্য
ছোটগল্পের সংজ্ঞা ও তাৎপর্য
সাহিত্য তত্ত্ব (পর্ব-০১)
সাহিত্যের ক্ষেত্রে ছোটগল্পের আগমন অপরাপর সাহিত্য সৃষ্টির তুলনায় বিলম্বিত হলেও পাঠক হৃদয় জয় করার ব্যাপারে এর কৃতিত্ব অধিকতর। বর্তমান কালের জীবনের জটিলতায় সাহিত্যরস পিপাসা নিভৃত্তির পরিপ্রেক্ষিতে ছোটগল্পের উপযোগিতা অনন্য সাহিত্য শাখার ছড়িয়ে আছে। গল্প এবং আকৃতিতে ছোট হলেও ছোটগল্প হয় না। আকৃতিগত ব্যতীত প্রকৃতিগত এবং মর্মগত অনেক বিভিন্নতা ইহাকে উপন্যাস হতে পৃথক শ্রেণীভুক্ত করেছে।
এক কথায় ছোটগল্পের সংজ্ঞা নির্দেশ করা অসম্ভব। অনেকে অনেকভাবে এর সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন।
E.A. Poe বলেন, “যে গল্প অর্ধ-হতে এক বা দুই ঘণ্টার মধ্যে এক নিঃশ্বাসে পড়িয়ে শেষ করা যায়, তাকে ছোটগল্প বলে।”
H.G. Wells বলেন, “যে ছোটগল্প ১০ হতে ৫০ মিনিটের মধ্যে শেষ হওয়া বাঞ্ছনীয়।”
আসল কথা এই যে, ছোটগল্প ছোট হবে বলে তাতে জীবনের পুনর্বার আলোচনা থাকতে পারে না। জীবনের খন্ডাংশকে লেখক যখন রসনিবিড় করে ফুটাতে পারেন তখন তার সার্থকতা। জীবনের কোন একটি বিশেষ মুহূর্তে, কোন বিশেষ পরিবেশের মধ্যে কেমনভাবে লেখকের কাছে প্রত্যক্ষ হয়েছে, ইহা তারই রূপায়ণ।
আকারে ছোট বলে এখানে বহু ঘটনার সমাবেশ বা বহু পাত্র-পাত্রীর ভিড় সম্ভবপর নহে। এতে অনাবশ্যক কথা, অনাবশ্যক ভাষা, অনাবশ্যক চরিত্র ও ঘটনা প্রভৃতিকে নিষ্ঠুরভাবে বর্জন করা হয়। লেখক শুধু একটি রসঘন নিবিড় মুহূর্তের, One per established design-এর জয়োল্লাসে পরিকল্পনায় মগ্ন থাকেন এবং আত্মকেন্দ্রিক মনোভিনিবেশের সাহায্যে গ্রহণ করেন।
ছোটগল্পের আরম্ভ ও উপসংহার নাটকীয় হওয়া চাই। সত্য কথা বলতে কি, কোথায় আরম্ভ করতে হবে, কোথায় সমাপ্ত রেখা টানতে হবে – এই শিল্পদৃষ্টি যার নাই, তার পক্ষে ছোটগল্প লেখা লাঞ্ছনা বই কিছু নয়।
ড. সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এর মতে, “একটি ক্ষুদ্র আখ্যান খন্ডে সমগ্র জীবন তাৎপর্য প্রতিবিম্বিত করাই ছোটগল্পের উদ্দেশ্য ও শিল্প রূপের প্রেরণা।”
ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা,
ছোটো ছোটো দুঃখকথা
নিতান্তই সহজ সরল,
সহস্র বিস্মৃতিরাশি
প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দু-চারিটি অশ্রুজল।
নাহি বর্ণনার ছটা
ঘটনার ঘনঘটা,
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ।
অন্তরে অতৃপ্তি রবে
সাঙ্গ করি' মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।