‘কুসংস্কারের ছায়াতলে’ — শৈশব, মায়া ও যুক্তির মাঝে এক কাব্যিক সত্য
কুসংস্কারের ছায়াতলে
অপু চন্দ্র বর্মন
শিক্ষার আলো জ্বলে চারিদিকে, তবু,
কুসংস্কার নামক ছায়া লেগে থাকে রুধু।
বলে যারা— “ইহা মোহ, অন্ধতার ফল”,
ভেবে দেখে কি কেউ, তার পেছনে কি কল?
শৈশবের স্মৃতি— এক পুকুরতীর,
মা বলতেন— “বড় ব্যাঙ, নামিস না নীর!”
ভয় পাইয়ে রাখতেন, নিষেধের ছলে,
ভাবতাম— ব্যাঙ বুঝি গিলে নেবে জলে!
কিন্তু মা তো জানতেন, সাঁতার তো নেই জানা,
একটুখানি ভুলে, হারাই জীবনের ধেই।
বুঝাতে চাইতেন মা, ভালবাসার ব্যথা,
সোজা কথায় নয়, বলতেন ছল-ছাঠা।
এখন ভাবি— সেসব কি নিছক ছলনা?
না কি মমতার ভাষা, প্রাচীন যবনিকা?
যা বুঝিনি তখন, আজ বুঝি গভীরে,
কুসংস্কার নামের ছায়া কি চির আঁধারে?
হয়তো অনেক ‘বিধান’ শুধুই অলিখিত,
যা লেখা নয় বইয়ে, হৃদয়ে লিখিত।
ভয়ের মোড়কে যাহা, আসলে ছিল প্রহরী,
ভুল পথে পা দিলে, আঁকড়ে ধরা রহি।
তবু আজকের জ্ঞানী বলে— “ইহা তো মিথ্যা”,
“যা বিজ্ঞানে নয়, তাহা মানা বৃথা।”
কিন্তু অনুভব কি সবই শুধু পরিমাপ?
প্রেমের সংজ্ঞা কি আছে বিজ্ঞানকথার ছাপ?
ওরে তথাকথিত জ্ঞানী, থেমে ভাব একটুখানি,
মায়ের নিষেধের পেছনে কত আবেগ, কত জানি!
যে ‘কুসংস্কার’ বলে হাসিস, তা তো বেঁচে থাকার গান,
নিয়মের আড়ালে ছিল ভালবাসার চিরকথন-প্রমাণ।