নিঃশব্দ মুহূর্তের প্রার্থনা | অপু চন্দ্র বর্মন

নিঃশব্দ মুহূর্তের প্রার্থনা | অপু চন্দ্র বর্মন

নিঃশব্দ মুহূর্তের প্রার্থনা

তোমার সান্নিধ্যে কিছু নিঃশব্দ মুহূর্তের প্রার্থনা করি— না, কেবলমাত্র প্রার্থনা নয়, বলিতে পারো— এ এক অনুরাগপূর্ণ অভিলাষ, হৃদয়-গভীরে গোপনে পোষিত এক গূঢ় আকাঙ্ক্ষা, যাহা প্রকাশিত হয় না শব্দে, কিন্তু ধ্বনিত হয় হৃদয়ের গূঢ়তম স্তর হইতে।

আমি চাহি— তোমার নিকট, তোমার অন্তরঙ্গতায়, কিছু অনাবিল, অলৌকিক, অলক্ষ্য প্রহর, যাহাতে কাহারও কোলাহল নাই, সমাজের বিভ্রান্তি নাই, ব্যস্ত জীবনের কোন তাড়না নাই— থাকিবে কেবল তুমি ও আমি, আর একটুকরো নিস্তব্ধ, নিষ্কলঙ্ক প্রেম। সে প্রেম নহে কেবল বাহ্যিক— তাহা হইবে আত্মার প্রেম, যে প্রেমে নেই আবরণ, নেই ভান, নেই ভোগের আকাঙ্ক্ষা; যে প্রেমে আছে আত্মবিলয়, আত্মদান, আর চিরন্তন স্নিগ্ধতা।

সে সকল মুহূর্তে, হে প্রিয়তমা, তুমি কথা বলিও না, আমিও বলিব না। আমরা নীরব থাকিব— অথচ সেই নীরবতায় উচ্চারিত হইবে সহস্র অনুক্ত শব্দ, নিঃশব্দ গানে মূর্ছিত হইবে হৃদয়ের আবেগ, আর উভয়ের দৃষ্টির সম্মিলনে ফুটিয়া উঠিবে অমর প্রেমের অপার ছবি। সেই নিঃশব্দতা হইবে না শূন্যতা— তাহা হইবে এক গভীরতর সত্তা, এক মহাজাগতিক অনুভব, যেন আমাদের প্রাণদ্বয়ের মিলন ঘটিতেছে অদৃশ্য এক বন্ধনে, শব্দের অতীত এক নীরব ভাষায়।

চিন্তন করো— সেই রাত্রি, যেখানে জ্যোৎস্না ঢালিয়া দিবে রৌদ্রস্নাত সুধা, আমরা দুটি প্রয়াণহীন তরঙ্গের ন্যায় মিশিয়া থাকিব হৃদয়-সাগরে, সেখানে নাই দিবসের ক্লান্তি, নাই অতীতের গ্লানি, আছে শুধু অনন্ত বর্তমান— তুমি, আমি, এবং নীরবতা।

আমি তোমার চাহনিতে হারাইতে চাই, তোমার নিঃশ্বাসে খুঁজিতে চাই জীবনের সংগীত, তোমার কণ্ঠহীন উপস্থিতিতে অনুভব করিতে চাই সেই স্পন্দন— যা বলে, 'আমরা একে অপরের', না বলিয়াও।

হে ভালোবাসা, আমার এ প্রার্থনা চিরন্তন— নয় কেবল আজকের, নয় কেবল শরীরের, বরং তা এক আত্মিক মিলন, যাহা কালজয়ী, যাহা নিঃশব্দ, অথচ সর্বোচ্চ বলিষ্ঠ।

সেই মুহূর্তগুলি হোক ক্ষণস্থায়ী, তবু চিরন্তন হোক স্মরণে। সেই মুহূর্তগুলি হোক ভাষাহীন, তবু হৃদয়স্পর্শী হোক অনুভবে। আর তুমি হে প্রিয়তমা, থাকিও সেই নীরবতার মাঝখানে, আমার চেতনার গভীরতম স্তরে— যেখানে তুমি শুধু মানুষ নও, তুমি এক উপাস্য প্রেমের প্রতীক।

— অপু চন্দ্র বর্মন

সোমবার; ৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।

Next Post Previous Post