সঞ্জীবনী— অপু চন্দ্র বর্মন | বাংলা কবিতা ২০২৫

 সঞ্জীবনী


অরণ্যের গহন গাত্রে হঠাৎ আলোকরশ্মি প্রবেশ করিলে,

পত্রমর্মরের আড়ালে সঞ্চারিত হইয়া উঠে সূক্ষ্ম জীবনের নিঃশ্বাস।

সেই অনাবৃত নিস্তব্ধতায় আমি অনুসন্ধান করি তোমার মুখচ্ছবি,

যেমন স্রোতধারা অন্তরালে খুঁজিয়া ফেরে মহাসমুদ্রের গভীরতা।


সমীরণ বহিয়া আসে দূরাগত ক্ষেত্র ছুঁইয়া,

তার সহিত ভাসিয়া আসে মাটির সঞ্জীবনী গন্ধ।

যখন তুমি নিকটে উপস্থিত হও,

আমার বক্ষস্থলে সেই গন্ধ জাগাইয়া তোলে তরঙ্গ—

যেন সুদীর্ঘ অতীত জন্মের স্মৃতি পুনরায় উদ্ভাসিত হইল।


তুমি উপস্থিত হইলে জগৎ থমকিয়া যায় না,

কিন্তু আমার অন্তরস্থিত সময় হঠাৎ স্থবির হইয়া পড়ে—

যেন ঘড়ির কাঁটা আর অগ্রসর হইতে চাহে না,

শুধু প্রতিধ্বনিত হয় অর্ন্তস্রোতের মৃদু ঝঙ্কার।


আমার প্রেম কোন সিদ্ধান্ত নহে,

এটি মৃত্তিকার ন্যায়, যাহা আপন ইচ্ছায় জন্ম দেয় তৃণ,

এটি নদীর ন্যায়, যাহা আপন স্রোতধারায় ধাবমান,

তুমি চাহো বা না চাহো—

আমি সেই নদীর তরলতা, যাহা অবিরাম প্রবাহমান।


যখন রজনী নেমে আসে,

অন্ধকারের অগভীরতায় দাঁড়াইয়া শুনি পাখিশ্রেণীর নীরবতা,

সেই মুহূর্তে প্রতিভাত হয়—

তুমি যেন কানে কানে ফিসফিস করিতেছ—

"এই ধরণী একাকী নহে,

আমাদের প্রেমই তাহার চিরন্তন ভাষা।"


ধরণী অনেক সময় কঠোর,

তথাপি তোমার হাস্যমুখে আমি প্রত্যক্ষ করি করুণা।

যখন তুমি নিবিড় দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকো আমার প্রতি,

আমি যেন পুনর্জন্ম লাভ করি—

আলোকস্পর্শে পূর্ণ হয় শিরা-উপশিরার প্রতিটি কণিকা।


আমার হৃদয় আর কেবল হৃদয় নহে,

এ যেন শস্যক্ষেত্রের সমীরণ,

যাহা আপনিই জাগ্রত করে জীবনের সঙ্গীত।

তুমি সেই সমীরণের অনন্ত প্রেরণা,

আমার জীবনের গোপন অবলম্বন।


প্রেম আমার নিকটে শপথ নহে,

এটি মৃত্তিকার গর্ভে শিকড়ের অন্তহীন বিস্তার,

তুমি যদি ছায়া হও,

আমি তাহার তলে জন্ম নেওয়া শীতল তৃণ হইব,

তুমি যদি অগ্নি হও,

আমি তাহার মধ্যে নিবিড় জ্বলিয়া থাকা অদৃশ্য ধূপশলাকা হইব।


আমার দিবসের সূচনা হয় তোমার অভাবনীয় শূন্যতায়,

রজনী অবতীর্ণ হয় তোমার স্মৃতিস্রোতের সিক্ততায়,

তথাপি প্রতিটি ক্ষণ তোমাকেই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে—

যেন ধরণী একটিমাত্র শিক্ষা দান করে—

প্রেম মানেই শ্বাসের ন্যায় অনিবার্য।


অপু চন্দ্র বর্মন 

২ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।

রাজাগাঁও, ঠাকুরগাঁও

Next Post Previous Post