অন্ধকার মাঠে শুয়ে থাকে শিশির— অপু চন্দ্র বর্মন | বাংলা কবিতা ২০২৫
অন্ধকার মাঠে শুয়ে থাকে শিশির,
বাতাসে গুঞ্জন করে ঝিঁঝিঁর দল,
দূর আকাশে ডাকে একাকী পেঁচা।
আমি দাঁড়াই সেই নৈঃশব্দ্যের মধ্যে—
মুষ্ঠিবদ্ধ হস্ত ঊর্ধ্বে তুলে বলি—
কিছু করতে চাই।
চাঁদের আলো নদীর বুকে ভাসে,
মাছেরা অদৃশ্য ছায়ায় সরে যায় গভীরে,
শূন্য জলে জন্ম নেয় শান্তির রেখা।
আমি হাত বাড়াই সেই জলের দিকে—
যেন জীবন ধুয়ে যায় সমস্ত অস্থিরতা।
শাল গাছের ছায়ায় শুয়ে আছে মৃত পাতা,
তাদের শরীরে লেগে আছে কালের গন্ধ;
তবু প্রতিটি পাতার ভেতরে
কোনো একদিন জন্ম নেবে বীজের স্বপ্ন।
মানুষ ছুটে চলে শহরের শোরগোলে,
তাদের চোখে ধোঁয়া,
তাদের কণ্ঠে হাহাকার;
তবু দূর গ্রামের প্রান্তরে
শিশুরা এখনো হেসে ওঠে
কোনো অজানা শান্তির সুরে।
আমি দেখি কৃষক—
তার ঘামে ভিজে ওঠে জমি,
ধানের গন্ধে ভরে যায় বাতাস।
সেই গন্ধেই আমি খুঁজে পাই শান্তি,
যা কোনো অস্ত্র দিতে পারে না।
কাক ভোরের আলোয় ডাকে,
তার ডানায় ঝরে পড়ে ভোরের রোদ;
মাঠ জেগে ওঠে নতুন সবুজে।
আমি বুঝি—
হার মানলেও পৃথিবী আবার জাগে
অদৃশ্য শান্তির বীজে।
বাতাস বয়ে যায় মৃদু,
শিয়াল ডাকে বনপথে,
ঝরে পড়ে অশোক ফুলের পাপড়ি—
সে নীরবতায় জন্ম নেয় অনন্ত।
পরাজয় শব্দটি
শুধু মানুষের নয়,
এটি শস্যেরও—
কোনো কোনো বীজ মরে যায়
মাটির গর্ভেই,
তবু অবশিষ্টরা
নতুন পৃথিবী গড়ে।
আমি চাই সেই বীজের মতো বাঁচতে—
শান্তির জন্ম দিতে
যদিও মৃত্যু এসে
শরীর ছিন্ন করে ফেলে।
নদীর তীরে দাঁড়াই,
জলে দেখি নিজের মুখ,
তার ভেতরে ঘুরে বেড়ায় অসংখ্য প্রশ্ন;
তবু তরঙ্গের ভাঙনে
মিলিয়ে যায় সমস্ত দ্বন্দ্ব।
অরণ্যের গাঢ় সবুজে
আমার ক্লান্তি হারিয়ে যায়,
বুনো ফুলের গন্ধে
আমার শরীর ভরে ওঠে শান্তির প্রতিশ্রুতিতে।
রাত্রির শেষে পাখিরা ডাকে—
নতুন দিনের ঘোষণা করে,
আমি শুনি তাদের সুরে
মৃত্যুর ওপারের কোনো বার্তা—
শান্তিই সেখানে চূড়ান্ত বিশ্রাম।
মাঠে ফড়িং উড়ে বেড়ায়,
তাদের ডানায় সূর্যের ঝলক;
আমি ভাবি—
এত ছোট জীবও
কী অদ্ভুত শান্তি নিয়ে বাঁচে।
মানুষ ভুলে যায়—
জীবন ক্ষণস্থায়ী,
তবু তারা ছুটে চলে
যুদ্ধের উন্মাদনায়;
আমি কেবল চাই
নক্ষত্রহীন রাতের নিচে
নিঃশব্দে বসে থাকা।
আমার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ঊর্ধ্বে—
এ কোনো ক্রোধ নয়,
এ এক আবেদন,
যেন পৃথিবী ভরে ওঠে
শান্তির অদৃশ্য আলোকরেখায়।
আমি চাই না সিংহাসন,
চাই না পতাকা,
চাই না কৃত্রিম জয়ের ধ্বনি।
আমি চাই কেবল—
একটি নদীর গুঞ্জন,
একটি বনের ছায়া,
একটি শিশুর হাসি।
সেই হাসির ভেতরেই
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জয়—
যা যুদ্ধ মুছে দেয়,
যা পরাজয়কে করে
অতিমাত্রায় তুচ্ছ।
অপু চন্দ্র বর্মন
১ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাজাগাঁও, ঠাকুরগাঁও